সবাইকে আমার সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের পোস্ট। আশা করি সাথেই থাকবেন । পুরোটা আলোচনা জুড়ে আমি আছি এম এইচ মামুন আপনাদের সাথে। চলুন তাহলে শুরু করি।
নিয়ম মাফিক কর্পোরেট চাকুরির চেয়ে একজন ফ্রিল্যান্সার অনেক বেশি আয় করেন থাকেন। সময় ও স্বাধীনতা পান অনেকটাই । কাউকে বস বস করে চিল্লাতে হয় না। নিজের ইচ্ছামত যেভাবে যখন খুশি কাজ করতে পারা যায় । সব মিলিয়ে নতুন একটি লাইফস্টাইল লিড করতে পারেন একেকজন ফ্রিল্যান্সার।
এগুলো একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য যেমন সুবিধা রয়েছে, তেমনি একজন ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন ধরণের অসুবিধাও বিদ্যমান । এর মধ্যে স্বাস্থ্যগত অসুবিধা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । আজকে আমি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পাঁচটি টি স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি, এবং এসকল সমস্যা থেকে কিভাবে ফ্রিল্যান্সাররা প্রতিকার পেতে পারেন সে বিষয় নিয়েও লিখেছি এই পোস্টে । আশা করি উপকারে আসবে সবার।
কর্মহীন জীবন! :p
ফ্রিল্যান্সাররা কোন কাজ কাম করেন না । রাগেন কেন ভাই? থামেন বাকিটা আগে পড়ে নেন । আগে থেকেই এক্সইটেড হয়ে যাবেন না । এই কাজ বলতে আমি কায়িক পরিশ্রম বোঝাচ্ছি, ঠিকাছে? একজন ফ্রিল্যান্সারকে অনেক লম্বা সময় কম্পিউটার টেবিলে সামনে বসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে হয় । যেহেতু অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার নিজ ঘরে বসেই কাজ করেন তাই বাইরেও খুব একটা বের হননা। বলা হয়ে থাকে ফ্রিল্যান্সাররা একধরণের ‘উপবিস্ট’ জীবন যাপন করেন । যে জীবনে ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি খুবই কম থাকে। আর এধরণের জীবন যাপনের ফলে ফ্রিল্যান্সাররা ওজন বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি হৃদরোগ সহ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
অনুগ্রহ করে ভয় পাবেন না ।
এ সমস্যাগুলোকে খুব সহজেই কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া যায়। সমস্যা দূর করতে আপনাকে খুব বেশি এফোর্টও নষ্ট করতে হবেনা; প্রয়োজন কাজের ফাঁকে নিয়মিত কিছু ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি, শারিরীক অনুশীলন, সাইক্লিং কিংবা হাঁটা। যাঁরা বাইরে বের হতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না তাঁরা বাসাতেই এক্সারসাইজ মেশিন বসিয়ে নিতে পারেন ।
ধকল!
ফ্রিল্যান্সিং কাজটাকে অনেকে সহজ মনে করেন। এটা আসলে এতটাও সহজ নয়! দেশের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টি বুঝে যাওয়ার কথা। যেহেতু ফ্রিল্যান্সারদেরকে একসঙ্গে একাধিক প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে হয় তাই প্রচুর ডেড-লাইন! আবার যেহেতু অনেক ক্লায়েন্ট তাই মাঝে মাঝে ‘ছ্যাঁচড়া’ ক্লায়েন্টদের খপ্পরেও পড়তে হয় । যারা ফ্রিল্যান্সারদের কাজ নিয়ে অসুন্তষ্ট হয়ে থাকেন তাদের কথা বললাম । ফ্রিল্যান্সারদেকে এই সব ধকল-ই নিয়মিত সহ্য করতে হয়। আর ধারাবাহিক এবং দীর্ঘায়িত ধকল স্বাস্থ্যগত সমস্যার অন্যতম উৎস। এটা নিয়মিত মাথাব্যাথার কারণ, মানসিক ক্লান্তি এবং রাত্রে ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। এটি শারীরিক অসুস্থ্যতা বাড়ায় এবং সক্ষমতা কমায়।
ধকলের সঙ্গে ফাইট করুণ ।
এটি খুব কঠিন কিছু নয়। আপনি নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখুন। স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তুলুন । ধকলকে এড়িয়ে চলায় সচেষ্ট থাকুন। আর হ্যাঁ, কাজ নেয়ার সময় যদি কোন ক্লায়েন্টকে ‘ঝামেলাপূর্ণ’ মনে হয় তাহলে সেই প্রজেক্ট না নেয়াই ভাল (আমার মতে) ! নিজের শরীর প্রতিও একটু খেয়াল রাখতে হবে । শুধু টাকা আর্ন করেই গেলাম নিজের শরীরের বারোটা বাজালাম তাইলে কি লাভ হবে?
একাকীত্ব
উপরে আগেই বলেছি, ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসে কাজ করেন। আর এর মানে হচ্ছে দিনভর একলা রুমে কাজ করেই যাচ্ছেন! এমনও ফ্রিল্যান্সার আছেন যাঁরা কেবল ওয়ার্কস্ট্রেশন-বেডরুম ছাড়া অন্য কোথাও যানই না! আপনি যদি এরকম একা থাকতে অভ্যস্ত হন তাহলে একটা সময় আসবে যখন সারাক্ষণই বিষন্নতার মধ্যে ডুবে থাকবেন। মনে রাখতে হবে, একাকীত্ব আমাদের মানসিকতার উন্নয়নে খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গর্তে ফেলবেন না!
প্রিয় ফ্রিল্যান্সার ভাই/বোন, নিজেকে কোনভাবেই একাকীত্বের গর্তে ফেলা যাবে না! আপনি একা কাজ করেন বলেই যে আপনাকে একা থাকতে হবে এমনটি কিন্তু নয়। সুযোগ পেলে নয়, সুযোগ বের করে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত বাইরে আড্ডায় যেতে হবে । বাসার বাইরে দেখা করতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় দিতে হবে।
পুনরাবৃত্তিমূলক স্ট্রেস ইনজুরি
ফ্রিল্যান্সাররা পুনরাবৃত্তিমূলক স্ট্রেস ইনজুরিতে (RSI) ভুগতে পারেন, এক্ষেত্রে কারপাল টানেল সিনড্রোম (Carpal tunnel syndrome)-সমস্যায় পড়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। পুনরাবৃত্তিমূলক স্ট্রেস ইনজুরিতে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচুর ব্যথা অনুভব করেন। এতে আপনার দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার সক্ষমতা হৃাস হয়।
দরকার মুক্তি!
এধরণের ইনজুরি থেকে বাঁচতে দরকার মুক্তি, কাজ থেকে নিয়মিত বিরতি।
ভিটামিন ডি-র অভাব
আগেই উল্লেখ করেছি যে ফ্রিল্যান্সাররা বেশিরভাগ সময়ই বাসায় থাকেন। আপনি কি এটা জানেন, এ কারণে তাঁরা ভিটামিন ডি-র অভাবে পড়বেন।
কিভাবে?
আপনি যদি প্রয়োজন মত দুধ না খান এবং রোদে খুব একটা না যান তাহলে আপনি ভিটামিন ডি সংকটে ভুগবেন সেটি নিশ্চিত! আপনাদের একটি মজার সমীক্ষার কথা বলি, আরব দেশীয় মহিলারা শেষ বয়সে নানা রকম হাড়ের সমস্যায় ভোগেন। কারণ খুঁজেতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব আছে । শতকরা ৬০ ভাগ মহিলারই এই অবস্থা। এমন রৌদ্রঝলসিত মরুর দেশে ভিটামিন ডি-এর অভাব? কিভাবে সম্ভব? কারণ আর কিছুই নয়, অতিরিক্ত পর্দাপুশিদার কারণে তাদের গায়ে রোদের কিরণ ঠিকভাবে পড়ে না। আবার ভাববেন না আমি পর্দা করতে নিষেধ করছি। আমাদের দেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সাররা সারাক্ষণ ঘরে থাকার কারণে রোদ্রের মাঝে একেবারেই যান না। আর এ কারণেই আপনাকে ভিটামিন ডি সংকটে পড়তে হতে পারে। সুতরাং আগে থেকেই সাবধান হয়ে যান।
এটা কোন ব্যাপার হলো?
আসলেই, এ সমস্যাটির সমাধান করা খুব কঠিন কিছু নয়। আপনাকে পরিমিত সময় রোদ্রের মধ্যে থাকতে হবে, সেজন্য বিকেলে ঘুরতে বের হতে পারেন । যেমন আমি প্রতিদিন বিকেলে বের হই ।
মুটিয়ে যাওয়া
এটা অনেকটা কমন সমস্যা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। ফ্রিল্যান্সাররা প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে থাকেন। অবশ্য ফ্রিজের মাত্র কয়েক ফুটের মধ্যে বসে অফিস করলে কে ই বা না খেয়ে থাকতে পারবে, তাইনা?
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা ডায়েট না করা আপনার স্বাস্থ্যগত সমস্যা বাড়াবে।
সমাধান?
খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিতে হবে উস্তাদ! আর কত খাবেন? সারা দুনিয়া তো গিলে খেয়ে নিলেন । খাওয়া কমান । আর সেটা না পারলে শারিরীক পরিশ্রম বাড়িয়ে দেওয়া খুবই জরুরী!
সতর্কবার্তা
আমি কোনো ডাক্তার নই। এই পোস্টটা লেখার জন্য আমি কোনো ডাক্টার বা এই জাতী কারো সাহায্য বা সহযোগিতা নেইনি। আমি রিসার্চ করেছি ইন্টারনেটের সহায়তায় এবং নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে সাজিয়েছি ।
আমি বিশ্বাস করি ফ্রিল্যান্সার ভাইয়েরাও নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ সচেতন এবং নিজের স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোকে রুখে দিতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। আমি আপনাদের এই পদ্ধতিগুলো শুনতে চাই। অন্যরা আপনাদের মন্তব্য শুনে অনুপ্রাণিত হবে । সবাইকে জানাতে পোস্টটি শেয়ার করতেও ভুলবেন না আশা করি।
রিসার্চ এবং লেখাঃ এম এইচ মামুন ।
Hits: 523
ফ্রিল্যান্স কাজের একটা বিশেষ দিক হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার সাথে আমাদের সময় পার্থক্যের কারণে অনেককেই রাত জেগে কাজ করতে হয় বা কাজ ধরার জন্যে রাত জেগে বিড করতে হয় ও ক্লায়েন্টের সাথে যোগযোগ করতে হয়। এর ফলে ক্রমাগত রাতের ঘুমটা না হওয়াতে অনেকেই মারাত্মক শারীরিক সমস্যায় ধীরে ধীরে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েন। সৃষ্টিকর্তা রাত তৈরী করেছেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে এবং ঘুমের মাধ্যমে সারাদিন মানব দেহে তৈরী হওয়া নানান বিষাক্ত পদার্থ হতে শরীর মুক্ত হয় তাছাড়া শরীরের বিবিধ প্রকার ক্ষয় পূরণ হয়ে নতুন উদ্যমে শরীর কর্মপোযগী হয়। রাত্রে যাদের জেগে থাকতেই হয় তারা যতই বলুক দিনে ঘুমিয়ে তা পুষিয়ে নেন তা এক ভ্রান্ত ধারণা। তাইতো যখন কারো দেহে জটিল রোগের প্রকাশ হঠাৎ করে দেখা দেয় তখন তা আর নিয়ন্ত্রণের সময় পাওয়া যায় না।
ধন্যবাদ আপনাকে
I am completely agree with your opinion. I am suffering waist pain from last couple of months.
Thanks. Take care of yourself, stay healthy.